সত্তরের দশকে ‘অধিক খাদ্য ফলাও’ আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান ‘পল্লী উন্নয়নে সোনালী সোপান’ হিসেবে বিআরডিবি’র অবদান আজ বহুল প্রশংসিত। সত্তরের দশকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি দ্বিগুন হওয়ার পিছনে বিআরডিবি’র অবদান সর্বজন স্বীকৃত। সে সময় বিআরডিবি বিভিন্ন ধরনের হস্তচালিত নলকূপ, গভীর নলকূপ কৃষকদের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে। সত্তর থেকে নববই দশকের শেষ পর্যন্ত সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিআরডিবি বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচিও গ্রহণ করে।
তৎপরবর্তীতে বিআরডিবি তার মূল কর্মকান্ড অর্থ্যাৎ দ্বি-স্তর সমবায়ের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বেশ কিছু বিশেষায়িত প্রকল্প সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করেছে; যেমন- মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচি(১৯৭৩), যুব উন্নয়ন কর্মসূচি (১৯৭৮), বিত্তহীন কর্মসূচি (১৯৮৪) ইত্যাদি। বিআরডিবি কর্তৃক বাস্তবায়িত এসব বিশেষায়িত প্রকল্পের সফলতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সংস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেমন- মহিলা উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পিডিবিএফ ইত্যাদি।
২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে বিআরডিবি সরকারের কাছ থেকে আবর্তক (কৃষি) ঋণ খাতে ৩২০ কোটি টাকা মঞ্জুরী পায় যা বিআরডিবি’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকান্ডে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ১৯৮৬-১৯৯৫ মেয়াদে বিআরডিবি, বার্ড, আরডিএ, বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়, জাইকা ও জাপানের কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পল্লী উন্নয়নে ‘‘লিংক মডেল’’ নামে একটি টেকসই ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই মডেলের মাধ্যমে গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মীদের মধ্যে Vertical Linkage এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবা গ্রহনকারী গ্রামবাসী ও সেবা প্রদানকারী যেমন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে Horizontal Linkage সৃষ্টি করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়। অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (পিআরডিপি) এর লিংক মডেলের মূল লক্ষ্যে হল জনগনের চাহিদা মাফিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য Bottom Up Planning বাস্তবায়ন করা। এ মডেলের মূল হাতিয়ার হল ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটির সভা (ইউসিসিএম)। ইউসিসিএম একটি Mini-Parliament যেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড জন অংশগ্রহন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। পিআরডিপি’র সফলতার কারণে বর্তমানে প্রকল্পটি ৩য় পর্যায়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া ভিন্ন লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিআরডিবি বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে যেমন- দেশের উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রদের কথা চিন্তা করে ‘‘উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচি’’(উদকনিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অপ্রধান শস্য যেমন- তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘‘অপ্রধান শস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি’’ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। তাছাড়া গভীর ও অগভীর নলকূপ সচল করার মাধ্যমে সেচ কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে ‘‘সেচ সম্প্রসারণ কর্মসূচি’’ হাতে নেয়া হয়েছে।
এ সকল কাজের স্বীকৃত স্বরূপ ‘‘বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান’’ (BIDS) এর ২০১০ সালের এক সমীক্ষায় জিডিপিতে বিআরডিবি’র অবদান ১.৯৩% বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরেও বিআরডিবি’র এ কর্মধারা অব্যাহত রয়েছে। এমডিজি, ভিশন-২০২১ এবং ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাথে সংগতি রেখে বর্তমানে বিআরডিবি’র ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস